Friday, 04.19.2024, 11:57 AM
My site
Login form
Search
Calendar
«  November 2011  »
SuMoTuWeThFrSa
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930
Main » 2011 » November » 17 » কংগোতে বাংলাদেশের কৃষি
কংগোতে বাংলাদেশের কৃষি
5:49 PM

Details


হোমarrow_menu মাটি ও মানুষের কৃষিarrow_menu কংগোতে বাংলাদেশের কৃষি

কংগোতে বাংলাদেশের কৃষি

লেখক: সঞ্জয় চাকী, সিনিয়র স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,চ্যানেল আই  |  রবি, ৩০ অক্টোবর ২০১১, ১৫ কার্তিক ১৪১৮

উগান্ডার এনটিবি এয়ারপোর্ট থেকে উড়োজাহাজ উপরে ওঠার পরই জানালা দিয়ে নীচের দিকে চোখ রাখি ...বিশাল জলরাশি। ভিক্টোরিয়া লেক। এই লেককে বলা হয় সোর্স অব নাইল বা নীল নদের উত্স। সাগরের মত এই লেক আর নীল নদ আফ্রিকার কৃষিকে প্রাণ দিয়েছে। লেকের সীমানা পার করে জাতিসংঘের ৭০ আসনের এই উড়োজাহাজ পাখির মত ডানা মেলে তুলতুলে সাদা মেঘের ভেতর দিয়ে উড়ে চলে পাশের দেশ কংগোর আকাশে। এবার নীচের দিকে তাকাই... পাহাড়ি উপত্যকার মধ্যে দড়ির মত চিকন চিকন আঁকা-বাঁকা রাস্তা আর নদী। আমাদের দেশের মত সমতল নয় কংগোর ভূপ্রকৃতি... পাহাড়ি উপত্যকার সারি। মাঝে মাঝে খেলনার মত ছোট্ট ছোট্ট বাড়ি। বিচ্ছিন্ন গাছাপালা। ঘণ্টাখানেকের জার্নির পরই প্রায় ন্যাড়ামাথা পাহাড় আর বাড়িঘরের সংখ্যা বাড়তে থাকে। অনেকটা আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের মত। তবে মোটেই আমাদের দেশের মত ঘনবসতি নয়। আকাশ থেকে উড়োজাহাজ নীচের দিকে নামতে থাকে..... আর সবুজের পরিমাণও বাড়তে থাকে। একসময় একটু ধাক্কা দিয়েই কংগোর ওরিয়েন্টাল প্রদেশের ইতুরি জেলার বুনিয়া এয়ারপোর্টে নেমে পড়ে জাতিসংঘের বিমান।

শান্তি রক্ষা মিশনে এসে এই এয়ারপোর্টের পরিচালনার দায়িত্বে বাংলাদেশ এয়ারফোর্সের সদস্যরা। আর নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাফর উল্লা খানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া আমরা ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদলও নেমে পড়ি কংগোর মাটিতে। ভিসার আনুষ্ঠানিকতার পর সড়কপথে দু’কিলোমিটারের মধ্যেই আমাদের প্রথম গন্তব্য.. বাংলাদেশ ব্যাটালিয়ান-২ -এর বুনিয়া ক্যাম্প। এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়েই দু’পাশে সবুজ। বড় গাছপালা কম। আর এই এয়ারপোর্টের সঙ্গেই বাংলাদেশ ব্যাটালিয়ান-২ -এর এরোমো ক্যাম্প। সেই ক্যাম্পের বেশ কিছু অংশ নিয়ে যেন বাংলাদেশের সবুজ বিপ্লব। পেঁপে, লাউ, সিম, বেগুন, ডাঁটা শাকসহ নানা ধরনের সবজি রয়েছে এখানে। ক্যাম্প ব্যাটালিয়ানের কমান্ডার কমান্ডো মেজর তৌহিদ। তাকে জিজ্ঞেস করলাম কীভাবে এসব সবজির গাছ হল এখানে? কংগোতে কি এসব সবজি হয়? হাসলেন, না এখানে এসবের চাষবাস নেই। আমরাই করেছি। বাংলাদেশ থেকে বীজ এনে এখানে লাগিয়েছি। জানালেন, এখানকার মাটি খুবই উর্বর। আবহাওয়াও ভাল। মাঝে মাঝেই বৃষ্টি হয়। যা লাগানো হয়... তাই-ই হয়। কোনোকিছুর জন্য সারও লাগে না। দেশের কৃতি এই কমান্ডো এসব বলতে বলতে আরো উত্সায়ী হয়ে উঠলেন। চোখে-মুখে গর্বের হাসি ছড়িয়ে বললেন, বাংলাদেশের পুকুর দেখবেন না? আমরা মাছ চাষ করেছি.. ফুল লাগিয়েছি। হাঁটতে হাঁটতে নিয়ে গেলেন... ফুল গাছ ঘেরা এক ছোট্ট পুকুরের দিকে। ক্যাম্পের একপাশে চারদিক মাটি দিয়ে বাঁধিয়ে বৃষ্টির পানি ধরে বানানো হয়েছে এই পুকুর। সিমেন্টের বস্তা দিয়ে পুকুরে নামার ঘাট। কমান্ডো তৌহিদ জানান, এক বছরের জন্য শান্তি রক্ষা মিশনে এসে দায়িত্বের বাইরের সময়টা অবসর। কারোরই ফ্যামিলি নেই এখানে। পরিচিত জনও বেশি নেই। তাই এই বিদেশ-বিভূঁইয়ে বাগান করার সখটাও মেটে। দেশের তাজা শাক-সবজি কাজেও লাগে।

এরচেয়েও অবাক হলাম মাহাগী গিয়ে। বুনিয়া থেকে প্রায় ২শ’ কিলোমিটার দূর। বাংলাদেশ ব্যাটেলিয়ান-২ -এর সদর দফতর। ভেতরে ঢুকতেই ডানপাশে চোখে পড়ল বেশ বড় জায়গা নিয়ে লম্বা ‘কিচেন গার্ডেন’। যেন বাংলাদেশের সবজি ফসলের টুকরো টুকরো প্রদর্শনী মাঠ।

পালং শাক, ডাঁটা শাক, বাঁধাকপি, বেগুন, মরিচ, পেঁপে গাছসহ বিভিন্ন রকমের বাংলার সবজি ফসলের মাঠ।

পরদিন সকালে উঠে দেখি কয়েকজন সেনা সদস্য আর কাংগোর এক যুবক ক্ষেতে কাজ করছেন। বেগুন তুলছেন। ওই বিদেশি ক্ষেতে কি করছে.... ওরা কি বাংলার কৃষকের মত কৃষি ক্ষেতের পরিচর্যা করতে পারে? বাংলাদেশের সেনা সদস্যদের  জিজ্ঞেস করতেই আরো অবাক। তারা জানালেন, ওকে বাংলায়ই জিজ্ঞেস করেন..ও বাংলাও বোঝে। বেশি কিছু না ভেবে কুচকুচে কালো ওই যুবককে জিজ্ঞেস করলাম, বাগানে কি করছ? ক্ষেত থেকে মাথা তুলেই জবাব... বাগানে কাজ করছি.. বাগানে সবজি করছি। এখানে কি কি সবজি হয়? ডাঁটা শাক, লাল শাক, কুমড়া, লাউ, পালং শাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, মরিচ সব সবই হয়। পরে এ বিষয়ে কথা হল বাংলাদেশ ব্যাটালিয়ান ২/১০ এর কমান্ডার কর্নেল সরদার হাসান কবিরের সঙ্গে। তিনি জানালেন, ও বাংলা গানও গাইতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাটলিয়ানের সদস্যরা কৃষি কাজের সঙ্গে বাংলাও শিখিয়েছে এরকম কিছু কংগোবাসীকে। এখানে কৃষি কাজের অন্যতম উদ্যোক্তা লে. কর্নেল রেজা। তবে রেজা এখন নেই এখানে। বুনিয়া গেছে। কয়েকদিনের মধ্যেই ফিরবে। লে. কর্নেল রেজা কংগোতে কৃষির সম্ভাবনা নিয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করেছেন বলে জানালেন কর্নেল কবির। তিনি বললেন, আফ্রিকায় বাংলাদেশের কৃষির অমিত সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের চেয়ে আয়তনে সতের গুণ বড় কংগো। আর লোকসংখ্যা বাংলাদেশের অর্ধেকেরও কম.. মাত্র ৭ কোটি। বেশিরভাগ জমিই পড়ে থাকে। চাষাবাদ করার প্রয়োজনীয় লোকও নেই, উদ্যোগও নেই। এখানকার বেশিরভাগ মানুষ জানেও না কৃষি উত্পাদন বাড়িয়ে খাদ্যের নিশ্চয়তা বা আয় বাড়ানোর কৌশল। এসব আলোচনা করতে করতে বললেন... আমাদের হাসপাতালটার পাশের কৃষি ক্ষেতটা দেখেছেন? বললাম, না। পাঠিয়ে দিলেন বাগান দেখতে। গিয়ে দেখি মিষ্টি কুমড়া তুলে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। যেন একটু পরেই ট্রাকে উঠিয়ে দূরের বাজারে নিয়ে যাওয়া হবে। আছে সিমের মাচাসহ অন্যান্য সবজি। শুধু বড় জায়গা নেই বলে ধান লাগানো হয়নি। ক্ষেতে কাজ করা সেনা সদস্য বললেন, সেটাও সম্ভব। তবে পাহাড়ি উপত্যকার কারণে সব জায়গা সেচ দেয়া যাবে না। অল্প সেচে যে জাতের ধান হয় তা লাগাতে হবে।

ফেরার পথে  মাহাগী এয়ারপোর্টে দেখা লে. কর্নেল রেজার সঙ্গে। সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়িই কৃষি নিয়ে কথা হল।  তিনি জানালেন, কংগো, উগান্ডা, সিয়েরালিওন, লাইবেরিয়া, সুদানসহ যেখানেই বাংলাদেশের সেনাবাহিনী শান্তি রক্ষার কাজ করছে সেখানে অনায়াসেই বাংলাদেশের কৃষি খাত সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। তানজেনিয়া বা অফ্রিকার অন্যদেশেও সেই সুযোগ রয়েছে। কর্নেল কবিরও ছিলেন। ছিলেন ঢাকা থেকে যাওয়া ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাফর উল্লা খান, এফবিসিসিআই প্রতিনিধি শাহ মোঃ আব্দুল খালেক, মিলিটারি ইন্টেলিজেন্টের হুমায়ুন শরীফসহ অন্যরাও। তারা সবাই মনে করেন, সরকার এবং ব্যবসায়ী মহল মিলে যৌথভাবে আফ্রিকায় কৃষি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এজন্য এসব দেশের সরকার ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করতে হবে ...এখানে আসতে হবে ।

 

 

Views: 1966 | Added by: Khokon | Rating: 0.0/0 |
Total comments: 0
Name *:
Email *:
Code *:
Entries archive
Our poll
Rate my site
Total of answers: 9
Site friends
  • Create your own site
  • Statistics

    Total online: 1
    Guests: 1
    Users: 0

    Copyright MyCorp © 2024